মালেক ইকবাল।।
আফগানিস্তানে তালেবান শক্তির উত্থানে নতুন সমীকরণে ভারত। এটাই হতে পারে নরেদ্র মোদির চিন্তার কারণ।
কাবুল দখলের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েই ভারতের উদ্দেশে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়েছে তালেবান। সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আফগানিস্তানে সেনা পাঠালে বিপদ আছে! কিন্তু এমন প্রকাশ্য হুঁশিয়ারির পরও তালেবান প্রশ্নে যেন একেবারেই নিঃসঙ্গ ভারত। এমনকি পাশে নেই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো মিত্র দেশগুলোও। অন্যদিকে পাকিস্তান, ইরান, চীন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে তালেবান নেতৃত্বের যোগাযোগ এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকেও ভারতকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তালেবান যদি ক্ষমতায় আসে তবে তাদের স্বীকৃতি দিতে লন্ডনের কোনও সমস্যা নেই। দিল্লির আশঙ্কা, আফগানিস্তান-পাকিস্তান নীতির ক্ষেত্রেও যুক্তরাজ্যের সমর্থন রয়েছে পুরোপুরি ইসলামাবাদের দিকে।
কূটনৈতিক দিক থেকে গতবারের চেয়ে এইবার তালিবানদের অনেক বেশি পরিপক্ক মনে হচ্ছে। যেমন, তালিবানরা ইতিমধ্যেই রাশিয়া এবং চীনের সাথে সমঝোতা করে ফেলছে। তালিবানদের উপর বহিঃবিশ্বের যেসব চাপ আসতে পারে, তারা প্রথমে সেগুলোই বন্ধ করতেছে। যেমন তারা বলছে, তালিবানরা আল কায়েদার মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠিকে আশ্রয় দিবে না। আইএস ইসলামের শত্রু, তালিবানদের শত্রু। একইসাথে চীনকে সন্তুষ্ট করতে তালিবান বলছে, তারা কোনো উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দিবে না। তার মানে বোঝাই যাচ্ছে, নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙ্গা করতে তালিবানরা আগে থেকেই চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে হাটছে। আর চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে পিছন থেকে যাবতীয় কলকাঠি যে পাকিস্তান চালাচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়।
তালিবানরা যতো দ্রুত কাবুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, পাকিস্তানের মুখের হাসি ততোই প্রসারিত হচ্ছে, আর ভারতের কপালে চিন্তার ভাজ ততোই স্পষ্ট হচ্ছে। কারণ, ভারত আফগান সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ। আর সেই চুক্তির জেরে তারা আফগানিস্তানে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। এখন সেসব বিনিয়োগ সবই জলে যাওয়ার পথে। আফগানিস্তান তালিবানদের হাতে চলে গেলে যদি ভারতের শুধু টাকা নষ্ট হতো, তারপরও হয়তো ভারত খুব একটা ভাবতো না। কিন্তু এখন তাদের কাশ্মির নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। আর সেই ভাবনার বাস্তবতাও দেখা যাচ্ছে। যে মোদি সরকার কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা রোহিত করেছে, সেই মোদি সরকার আবারও কাশ্মিরকে রাজ্যের মর্যাদা দিতে চাচ্ছে। আর এই সিদ্ধান্ত যে সীমান্তের চর্তুমখি চাপের কারণেই ভারত সরকার নিতে বাধ্য হচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়।
আফগানিস্তানে তালিবান শক্তির উত্থান হলে এই অঞ্চলের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এই পরিবর্তন কারও জন্য কাল আবার কারও জন্য হবে নতুন দুয়ার। রাজনীতির মাঠ বুঝা বড় দায়? দেখা যাক বল এখন কার পায়ে?
লেখক- প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা।