মালেক ইকবাল।।

একজন নাগরিকের হত্যাকাণ্ডের জন্য দেশের বিভিন্ন বিভাগকে কাজ করতে হয়। অর্থাৎ বিভিন্ন বিভাগের কিছু ইতিহাস, নিয়ম আর কিছু মানুষের ঐদ্ধ্যতের আর অবহেলার। দেশটা যখন হয় আমেরিকা তখন বিষয়টা হয় ভাবার। আবার হত্যাকান্ডের সাথে যখন জড়িত থাকে আমেরিকার পুলিশ বাহিনী তখন কপালে চোখ না উঠে পারে না। এমন এক হত্যাকাণ্ড কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের। এটা কি শুধুই একটা হত্যাকান্ড, নাকি আমেরিকার জগন্য দাস প্রথার ঘৃণ্য ইতিহাসের পরিণতি। অনেক মানুষ শুধু বর্তমানের ঘটনাপ্রবাহ দেখেন, বিবেচনা বিশ্লেষণ করেন না, কিন্তু এখন যা ঘটছে তার মূলে রয়েছে ৪০০ বছরের পুরনো অবিচারের ইতিহাস।

ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড ধরে চেপে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। ঘাড়ে চাপা দেয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক কাকুতি-মিনতি করেছিলেন ফ্লয়েড।প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে সাহায্য করার অনুরোধ জানালেও পুলিশ তাতে সাড়া দেয়নি কিন্তু একজন শ্বেতাঙ্গ নারীর কুকুরের জন্য সাড়া দিয়েছিল। এই ঘটনা যেদিন ঘটে সেইদিনই আর একটি ভিডিও ভাইরাল হয় যেটি ছিল নিউইয়র্কে এক শ্বেতাঙ্গ নারীর পোষা কুকুর নিয়ে তুচ্ছ একটা বিতর্কের জেরে পুলিশ ডাকার এবং এর জন্য পুলিশের এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির ওপর চড়াও হবার ঘটনার।

ফ্লয়েডের মৃত্যু কি কোন স্বাভাবিক মৃত্যু নাকি হত্যাকান্ড? না, এটি শুধু একজন মানুষের করুণ মৃত্যুই নয়, এই ক্রোধের মূলে রয়েছে আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর যুগ যুগ ধরে চলা পুলিশী নির্যাতন যাকে বলা হয় রানওয়ে স্লেভ প্যাট্রল। যুক্তরাষ্ট্রে শেতাঙ্গ পুলিশের নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় চলছে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে। বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র।এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বিক্ষোভ চলছে।এই প্রতিবাদে অংশ নিয়ে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন মার্কিন সহ বিভিন্ন দেশের সাধারণ মানুষ আর দেশ নায়ক।

ঐতিহাসিক এবং সমাজতাত্ত্বিকরা বলছেন, কৃষ্ণাঙ্গদের লক্ষ্য করে পুলিশের অব্যাহত এই বাড়াবাড়ির মূলে রয়েছে আমেরিকার ঘৃণ্য ইতিহাস -দাসপ্রথা। দাসপ্রথার যুগের অপরাধীরা সব প্রথার বৃত্ত থেকে বেরুতে পারেননি।“ আমেরিকান সমাজের ঘৃণ্য সেই ইতিহাসের গহ্বর থেকে এখনো পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেনি তেমন একটি প্রতিষ্ঠানের নাম করতে যদি বলা হয়, পুলিশের কথাই প্রথম আসবে। এই একবিংশ শতাব্দীতেও আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের অসময়ে মৃত্যুর অন্যতম কারণ পুলিশের নির্যাতন, গুলি। প্রাণঘাতী রোগসহ যতগুলো কারণে কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যু হয় সেই তালিকার ছয় নম্বরে পুলিশ। “কৃষ্ণাঙ্গরা পুলিশকে রক্ষক হিসাবে দেখেনা, তারা পুলিশকে অত্যাচারী, উস্কানিদাতা হিসাবে দেখে। পুলিশকে তারা শুধু ভয় পায়। আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে পুলিশের এই যে সম্পর্ক তা সেই দাসপ্রথার সময়ের সম্পর্কের মতই। সম্পর্কের মূল চরিত্র বদলেছে খুব সামান্যই।

ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্রের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে মারা গেছে ১০১৪ জন এবং বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে নিহতদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান। ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স নামে একটি বেসরকারি সংস্থার চালানো জরিপে দাবি করা হয়েছে যে আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় তিনগুণ বেশি মারা যায় কৃষ্ণাঙ্গরা।

আমেরিকায় দাসপ্রথার সময়ে দাসদের সংখ্যা যখন বাড়তে শুরু করে তখন বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে দক্ষিণে, দাসরা যাতে পালাতে না পারে অথবা শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করতে পারে তার জন্য রানওয়ে স্লেভ প্যাট্রল নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৈরি হওয়া শুরু হয়। শ্বেতাঙ্গ স্বেচ্ছাসেবীদের দিয়ে তৈরি হওয়া এই ‘রানওয়ে স্লেভ প্যাট্রল‘ই ছিল তখনকার পুলিশ বাহিনী। ‘রানওয়ে স্লেভ প্যাট্রলে‘র জামানা সম্পর্কে ইউএসএ টুডে পত্রিকায় কলামিস্ট ওয়েনি ফিলিমন লিখেছেন, “(কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের) লুকানোর কোনো জায়গা ছিলনা। তাদের জীবন কাটতো পুলিশের ভয়ে, তাদের প্রতিটি আচরণের ওপর পুলিশের কড়া নজর ছিল। রাস্তায়, বাড়িতে তাদের ওপর চড়াও হতো পুলিশ। এবং কোনো ধরণের সন্দেহ উদ্রেক হলে বা প্রতিবাদ করলেই মেরে ফেলা হতো।“

১৮৬৫ সালে দাসপ্রথা বিলোপের পর, রানওয়ে স্লেভ প্যাট্রল বিলুপ্ত হয়, কিন্তু আফ্রিকান আমেরিকানদের ওপর নজরদারির সেই প্রথা থেমে যায়নি, বিশেষ করে দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে। দাসপ্রথা বিলোপ হলেও সেসব রাজ্যে ‘ব্লাক কোড‘ নামে নানা আইন তৈরি হয় যার আওতায় কৃষ্ণাঙ্গদের জমির মালিকানা এবং চাকুরীর ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তারপর ১৯ শতকের শেষ দিকে আসে ‘জিম ক্রো‘ আইন যার ফলে শ্বেতাঙ্গদের এলাকায় কৃষ্ণাঙ্গদের বসবাস নিষিদ্ধ করা হয়। ক্লু ক্লাক্স ক্লান (কেকেকে) নামে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদি দল তৈরি করে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর হামলা, হত্যা শুরু হয়। সে সময় অনেক জায়গাতেই স্থানীয় পুলিশের অনেক সদস্য এবং সরকারি কর্মচারীদের অনেকে কেকেকের সদস্য ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান হিসাবে পুলিশের বিরুদ্ধে অন্যতম বড় অভিযোগ তারা অস্বচ্ছ এবং তাদের দায়বদ্ধতা খুবই কম। ফলে কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলেও তাদের চাকরীচ্যুত করা কঠিন। কারো চাকরি গেলেও পাশের কোনো এলাকার পুলিশে তার চাকরি হয়ে যায়। জবাবদিহিতার অভাব, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাব, দুর্বল নজরদারি – এগুলোর বিষাক্ত সংমিশ্রণের সাথে যোগ হয় বর্ণবাদ।ফলে, আধুনিক আমেরিকাতেও কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর ওপর পুলিশের যাঁতাকল থামার কোনো লক্ষণ নেই। তার অন্যতম প্রমাণ – কারাগারে কয়েদির সংখ্যা। ১৯৮০ এবং ২০১৫ কারাগারে কয়েদির সংখ্যা চারগুণ বেড়ে ২২ লাখ হয়েছে এবং তার ৩৪ শতাংশই কৃষ্ণাঙ্গ যদিও মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ নিজেদের কৃষ্ণাঙ্গ বলে পরিচয় দেয়।

বিভিন্ন হিসাব অনুযায়ী আমেরিকায় প্রতি বছর পুলিশের হাতে মারা যায় ১,২০০ ব্যক্তি। কিন্তু ৯৯ শতাংশ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা হয় না। মিনেসোটায় পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর আমেরিকার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে যে ব্যাপক প্রতিবাদ ও দাঙ্গা হয়েছে তাতে গণচাপের মুখে এবার পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু আমেরিকার আইনে, পুলিশ অফিসারদের ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ আইনি সুরক্ষা রয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ‘খুবই বিরল’ পুলিশের সহিংস আচরণের খতিয়ান পর্যবেক্ষণকারী একটি প্রকল্পের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০১৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আমেরিকায় পুলিশের হাতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৭,৬৬৬। এর মধ্যে মাত্র ৯৯টি ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে , যা মোট হত্যার ঘটনার মাত্র ১.৩%। এবং এর মধ্যে মাত্র ২৫টি ঘটনায় পুলিশ দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।

এর কারণ পুলিশ এবং কৌঁসুলি দুজনেই আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী সংস্থার অংশ- তারা পরস্পরের সহযোগিতায় কাজ করে । অপরাধের সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ এবং মামলার সময় আদালতে সেগুলো পেশ করার ব্যাপার কৌঁসুলিরা পুলিশের ওপরই নির্ভর করেন।

তাদের এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে এই ব্যবস্থায় “ফৌজদারি মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে তাদের দায়বদ্ধতা প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায়।” এছাড়াও শক্তি প্রয়োগের অধিকার আইনত পুলিশকে দেয়া আছে। যেমন আইন অনুযায়ী আত্মরক্ষায়, অথবা অন্য কারো মৃত্যু ও গুরুতর আহত হওয়া ঠেকাতে পুলিশ শক্তি প্রয়োগ করতে পারে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার ক্ষেত্রে আইনি রক্ষাকবচ থাকায় পুলিশি বর্বরতার শিকার মানুষের জন্য একটাই পথ খোলা থাকে – সেটা হল দেওয়ানি আদালতে মামলা আনা। মি. নেইলি বলছেন পুলিশের জন্য যে সুনির্দিষ্ট রক্ষাকবচ রয়েছে তার কারণে মি. ফ্লয়েডের পরিবারের জন্য ন্যায় বিচার পাওয়া কঠিন হতে পারে।
জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একজন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। কিন্তু একটি বিচারে সবকিছু বদলে যাবে, সে সম্ভবানা কেউ আশা করছেন না। অথবা বিচার হবে কি হবে না সে প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়। কারণ এরকম অসংখ্য নজির আছে যেখানে সেই হত্যাকান্ডের বিচার হয় নি।

আমেরিকায় পুলিশের নৃশংস আচরণে মৃত্যুর যেসব ঘটনায় ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়েছে তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হল:

ট্রেইভন মার্টিন, ২৬শে ফেব্রুয়ারি ২০১২
ট্রেইভন মার্টিন ছিল ১৭ বছর বয়সী একজন কৃষ্ণাঙ্গ স্কুল ছাত্র। ফ্লোরিডার স্যানফোর্ডে জর্জ জিমারম্যান নামে একজনের গুলিতে সে প্রাণ হারায়। জুরি ২০১৩ সালে মি. জিমারম্যানকে নির্দোষ বলে রায় দেয়। আমেরিকান আইনে জিমারম্যান বলতে পেরেছিল যে আত্মরক্ষার স্বার্থে সে গুলি চালিয়েছিল এবং সেটাই এই মামলায় তার পক্ষে যায়। কিন্তু তরুণ ট্রেইভনের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবরা সবসময় বলে এসেছে জিমারম্যান তাকে খুন করেছে। এই হত্যার ঘটনা থেকেই জন্ম নেয় ‘কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও মূল্যবান’ নামের সামাজিক আন্দোলন।

এরিক গার্নার, ১৭ই জুলাই ২০১৪
এরিক গার্নার মারা যান নিউইয়র্কে দম বন্ধ হয়ে। খুচরা সিগারেট অবৈধভাবে বিক্রি করছেন এই সন্দেহে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ঘটনার ফুটেজে দেখা যায় মি. গার্নার বারবার কান্নাজড়ানো গলায় আকুতি করছেন, “আমি নি:শ্বাস নিতে পারছি না” আর একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ, ড্যানিয়েল পান্টালিওকে দেখা যায় তার হাত দিয়ে গার্নারের গলা টিপে ধরে আছেন এমনভাবে যাতে তিনি দম নিতে না পারেন। দুজনেই মাটিতে ধ্বস্তাধ্বস্তি করছে।
ওই রাজ্যের গ্র্যান্ড জুরি রায় দেয় পুলিশ অফিসার পান্টালিও-র বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আনা হবে না। এ ঘটনার পর আমেরিকার বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়।

মাইকেল ব্রাউন, ৯ই অগাস্ট ২০১৪
মিসৌরিতে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসনের সঙ্গে ১৮ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ মাইকেল ব্রাউনের এক বাদানুবাদের জেরে ওই পুলিশ অফিসারের গুলিতে নিহত হন ব্রাউন। এই ঘটনার পর ‘কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও মূল্যবান’ আন্দোলন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও সামনে আসে। ওই বছরই নভেম্বর মাসে জুরি পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সিদ্ধান্ত নাকচ করে দেন।

ওয়াল্টার স্কট, ৪ এপ্রিল ২০১৫
দক্ষিণ ক্যারোলাইনার নর্থ চালর্সটনের ৫০ বছর বয়স্ক কৃষ্ণাঙ্গ এক ব্যক্তি ওয়াল্টার স্কট যখন পুলিশ অফিসার মাইকেল স্ল্যাগারের কাছ থেকে ছুটে পালাচ্ছিলেন তখন তাকে পিঠে তিনবার গুলি করা হয় এবং মারা যান মি. স্কট।

ফ্রেডি গ্রে, ১২ই এপ্রিল ২০১৫
পুলিশের গুলিতে ওয়াল্টার স্কটের মৃত্যুর মাত্র এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরে আরেকটি বিতর্কিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পঁচিশ বছর বয়সী ফ্রেড গ্রে-র পকেটে একটি ছুরি পাবার পর অস্ত্র বহন করার দায়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েক ঘন্টা পর তাকে মেরুদণ্ডের গুরুতর আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক সপ্তাহ পর মি. গ্রে মারা যান।কিন্তু মি. গ্রে-কে গ্রেপ্তার করার সঙ্গে জড়িত ছয়জন পুলিশ অফিসারের মধ্যে যে তিনজনকে আদালতে হাজির হতে হয়েছিল তারা নির্দোষ প্রমাণিত হয় এবং বাকি তিনজনকে কখনও অভিযুক্তই করা হয়নি।

সান্ড্রা ব্ল্যান্ড, ১৩ই জুলাই ২০১৫
টেক্সাস রাজ্য পুলিশ বাহিনীর সদস্য ব্রায়ান এনসিনিয়া ট্রাফিক আইন লংঘনের ছোটখাট এক অভিযোগে ২৮ বছর বয়স্ক সান্ড্রা ব্ল্যান্ডের গাড়ি থামায়।পুলিশ যখন তার দিকে আসছিল সান্ড্রা তখন একটা সিগারেট ধরিয়েছিল। সান্ড্রা সিগারেট নিভিয়ে ফেলতে অস্বীকার করলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পুলিশ অফিসারের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়। তিনদিন পর কারাগারে আত্মহত্যা করেন সান্ড্রা। তার ঘটনায় #সেহারনেম নামে আরেকটি জনপ্রিয় আন্দোলন হয়, যে আন্দোলনের মাধ্যমে আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা কীভাবে পুলিশি নির্মমতার শিকার হচ্ছেন সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস নেয়া হয়।

আতাতিয়ানা জেফারসন, ১৩ই অক্টোবর ২০১৯
ডালাসের ফোর্থ ওয়ার্থে ২৮ বছর বয়সী আতাতিয়ানা জেফারসনকে তার নিজের শোবার ঘরে গুলি করেন পুলিশ অফিসার অ্যারন ডিন।
মিস জেফারসনের সদর দরোজা খোলা আছে একথা জানিয়ে পুলিশকে ফোন করে তার এক প্রতিবেশি এবং পুলিশ অফিসার অ্যারন ডিনকে সেখানে পাঠানো হয়। মি. ডিন তার শোবার ঘরের জানালা দিয়ে তাকে গুলি করে। তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এখনও তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি।

ব্রেওনা টেলর, ১৩ই মার্চ ২০২০
ব্রেওনা ২৬ বছর বয়সী জরুরি চিকিৎসা বিষয়ক একজন প্রকৌশলী ১৩ই মার্চ লুইভিলের কেন্টাকিতে তার ফ্ল্যাটে ঢুকে পুলিশ অফিসাররা তাকে আটবার গুলি করে।তারা ওই বাসায় অবৈধ মাদক আছে এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালাতে গিয়েছিল। অনুসন্ধানের জন্য তাদের কাছে পরোয়ানা ছিল। কিন্তু ব্রেওনার ফ্ল্যাটে কোন মাদক পাওয়া যায়নি। লুইভিলের পুলিশ জানায় একজন পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হলে তারা পাল্টা গুলি চালায়। ওই গুলিতে একজন পুলিশ আহত হয়েছিল বলে তারা জানায়।

দেশটিতে পুলিশি নির্মমতার প্রতিক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে গড়ে উঠেছে # BlackLivesMatter (কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনওমূল্যবান) নামের আন্দোলন। গায়ক বিয়োন্সে, বাস্কেটবল খেলোয়াড় লেব্রন জেমসের মত তারকারা এই আন্দোলনকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। আব্রাহাম লিংকন, মার্টিন লুথার কিং এবং আরও অনেকের আমরাও সমর্থন করি এবং আশা করি একদিন সাদা কালো গায়ের রঙে বিবেচিত না হয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে সবাই এক সাথে ভ্রাতৃত্তের বন্ধনে আবন্ধ হয়ে এক টেবিলে বসে এই পৃথিবী সৌন্দর্য্য উপভোগ করবে।

লেখকঃ প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

Website |  + posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *