আমার তাবুটা ছিল টিলার একদম দক্ষিণের কিনারায়। তাবু থেকে পা ফেললেই ঢাল শুরু। ঢালের পাশ দিয়ে আর পাহাড়ের কোল ঘেষে বয়ে গেছে পাহাড়ি নদী। বসে থাকলেও দূর পাহাড় পর্যন্ত চোখ চলে যায়। দক্ষিণা বাতাস এসে সারাদিন হুটোপুটি করে। এখানে আসা দুদিন হলো। আসলে কিছুই করিনি, একদম কিচ্ছু না । শুধু আকাশ দেখেছি, মেঘ দেখেছি, চাঁদ দেখেছি । গভীর রাতে অদূরে ঘাসের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে এক পলকে কোটি কোটি তারা গুনেছি । পাতার সরসর শব্দ আর তক্ষকের ডাকে কান পেতেছি । অন্ধকার তাবুতে বসে ছোট্ট একটা রিডিং লাইট জ্বালিয়ে বসে বসে ভুতের গল্প পড়েছি । বেশীরভাগ সময়েই মোবাইলের নেটওয়ার্ক ছিল না, সময়-অসময়ে কল-মেইল-মেসেজ কিচ্ছু ছিল না ।
সূর্য্য ওঠার আগেই ঘুম ভেঙেছে তাবুর পাশে পাখিদের চ্যাঁচামেচীতে । উঠে দেখেছি পাহাড়ের গায়ে সূর্য্য ওঠার অপরূপ ছবিখানা । আর দেখেছি বৃষ্টি । দূর পাহাড়ের কোল থেকে ছুটে আসতো দস্যি মেঘের দল। ঝুম বৃষ্টিতে ভাসিয়ে নিয়ে যেত তাবুর চারপাশ । তাবুতে বসে মাথার উপর ঝুম বৃষ্টির শব্দ আর হাতে বিশ্ববিখ্যাত ইতালির Lavazza কফির মগ। চোখ মেলে দেখেছি রাই কিশোরীর মত পাহাড়ী বৃষ্টির নাচন রুপ ! বুঝতে পেরেছি বৃষ্টির নাচনের রুপ। কিন্তু তার মনের রুপ আর বুঝতে পারলাম কই!
হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙে গেল। আধো চোখে ঘড়িতে দেখলাম রাত প্রায় ৩ঃ৩৯ মিনিট! এক মিনিট উনত্রিশ সেকেন্ড লাগলো ঠাওর করতে ঠিক আমি কোথায় আছি! ও, আচ্ছা, তাবুতে।
নিজেকে খুব একা আবিস্কার করলাম। তারপর মনে হলো আরে আমি একা কেন? আমার পাশের কয়েকটা তাবুতে তো কয়েকজন আছে। একটু সাহস পেলাম। তাবুর চেইনটা খুলে আস্তে আস্তে খালি পায়ে বাহিরে আসলাম । চারপাশে নিশুতি রাত। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ঝগড়া চলছে । সাথে আরও নাম অজানা কতশত পোকা আর নিশাচর প্রাণীর শব্দমেলা ! একটু পর তক্ষক ডেকে উঠল দূরের একটা গাছের ফাঁকে। তক্ষকের ডাক এতদিন শুধু বইতেই পড়েছি, এই প্রথম শোনার অভিজ্ঞতা হলো । চারিদিকে কোনো মানুষ কিংবা যন্ত্রের শব্দ নেই । শুধুই নিশুতি রাতের নিজস্ব শব্দের মেলা। ভরা পূর্ণিমা । মাথার উপরের মেঘহীন আকাশে অ্যাত্তো বড় একখানা চাঁদ। সাদাটে মায়াবী আলোতে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চারিদিক ।
বিকেলে বৃষ্টি হয়েছিল । দূর পাহাড়ের সাথে সূক্ষ জালের মত হালকা কুয়াশা জড়িয়ে আছে – বৃষ্টির পর যেমন হয় । নিশুতি রাতে ঘাসের উপর বসে বসে অপার্থিব এবং প্রায় পরাবাস্তব এই সৌন্দর্য দেখছি আমি – একা, সম্পূর্ণ একা ! ও, সাথে আছে প্রথমা। তার তাবু থেকে একটু দূরে মেয়েটা পাহাড়ের ছোট্ট টিলার উপর বসে আছে। বাম পায়ে লাল শাড়ির পারারের নিচে হালকা একটা নুপুর আর এক হাতে দোয়াত কলম। তার সামনে সাদা বই এর উপর কালো দোয়াতের কালির বোতল আর কয়েকটা ময়ুরের পাখা। অন্য হাতে সাপের মতো প্যাচানো বকুল ফুলের মালা। মালাটা অবশ্য শুকিয়ে গেছে। দুবছর আগে সংসদ ভবনের সামনে দক্ষিণের বড় একটা গাছ থেকে পেরে দিয়েছিলাম। কত্ত মজার কাহিনী। এখনো মনে আছে। ক্লাস শেষে বাসায় ফিরছে। সাথে তার মা। তিনি সবকিছুই জানতেন। একদম ওপেন মাইন্ডেড। একমাত্র মেয়ের খুশির জন্য সবকিছু করতে পারে। এপর্যন্ত কোন চাওয়াই অপূর্ণ রাখে নি। আগে থেকেই আমি সংসদ ভবনের সামনে বসে আছি। আমাকে দেখে কাধের পিছনে রাখা ব্যাগ দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে। লজ্জার বিষয় টা সবসময়ই তার উপচে পড়ে। চোখে চোখ রেখে কখনও কথা বলেছে কিনা আমার মনে পড়ে না। সবসময়ই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে। এই জিনিসটা তাকে ভালো লাগার অন্যতম একটা কারণ। খুব কম কথা হয় তার সাথে। সে তার মাকে বলে তিনি আবার আমাকে বলেন। বকুল গাছের নিচে সিড়িতে বসে আছি। সে আমার সামনে দাঁড়িয়ে খেজুরের পাতা হাত দিয়ে মুড়াচ্ছে আর বলছে- বকুল ফুলের মালা আমার হেব্বি পছন্দ। আর স্মেলটা অহ মাই গড।–—প্লিজ।
এই প্রথম কোনকিছু এইভাবে চাইলো। তার কথা বুঝতে খুব কষ্ট লাগে। এত্ত ছোট ছোট্ট করে আস্তে আস্তে কথা বলে যে তার কথা শুনতে হলে ফুল এটেনশন তার দিকে দিতে হয়। কথা বলার সময় তার সাড়ে চারটা চুল ঠোঁটের কিনারে এসে লুকোচুরি খেলা করে। কথার শব্দে দোল খায়। মুগ্ধ হয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। আমিও দেখছি। এমন সময় সে বলল- কী দেখা হচ্ছে ওমন করে!
-তোমার কথার শব্দে দোল খাওয়া চুল।
-ও, বুচ্ছি। আমায় নয়। প্লিজ, আমার বকুল ফুল চাই।
-ও, আমিও বুচ্ছি। আমায় নয়। কিন্তু আমায় তো গাছে উঠতে হবে।
-উঠলেই ত হয়। ও, একটা কথা, ফুল কিন্তু মাটিতে ফেলা যাবে না।
– কেন, মানোত করছো নাকি?
-সেটা বলা যাবে না। আমি নিচে থেকে জামা ধরে রাখবো। উপর থেকে ফেললেই হবে। আমি একটা ফুলও মাটিতে পড়তে দিব না।
গাছের উপরে উঠার পর দেখলাম সে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। গাছের পাতার ফাঁকা দিয়ে বিকেলের সূর্যের রক্তিম আভা তার মুখের উপর কিরণ দিচ্ছে। ঠোঁটের কিণারের তিলটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। নারিকেল এর মত চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। কী মায়াবী লাগছে! আমি ইচ্ছে করেই কয়েকটা ফুল চোখের উপর ছুড়ে দিতেই বলল- প্লিজ, এমন সময় দুস্টামি না করলে হয় না।
ফুল পেয়ে আনন্দ আত্মহারা। কী হাসোজ্জল আর মায়াবী মুখ! যে কেউ দেখলে তার মায়াজালে আটকে যাবে। ফুলগুলো ব্যাগের মধ্যে নিল। আর কয়েক ডজন ফুল হাতে রাখলো। যাওয়ার সময় ফুলগুলো তিন নম্বর বোতাম খুলে আমার শার্টের মধ্যে দিয়ে বলল- কী সুন্দর স্মেল, তাই না! আগামীকাল বিকাল তিনটা উনত্রিশ মিনিটে বিমানবন্দরের রেল লাইনে দেখা হচ্ছে কিন্তু। ও, আরেকটা কথা, এই শার্টেই দেখতে চাই আগামীকাল। এই বলে পাগলির মত হাসতে হাসতে চলে গেল।
অথচ এই হাসিমাখা মুখটা এখন নিরব। চোখে মুখে না বলা অজস্র কথা। শুন্য আকাশের দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে। মনের রঙ তুলি দিয়ে আকাশের খাতায় লিখছে না বলা কথা। মনটা ভীষণ খারাপ। মনের আকাশে হয়ত এখনি বৃষ্টি নামবে! কয়েক বার ডাকলাম। কোন উত্তর দিল না। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- কী ব্যাপার, কি হয়েছে?
একটু অপ্রস্তুত হয়ে বিরক্তি ভাব নিয়ে বলল- বোরিং লাগছে।
মনে মনে ভাবলাম এমন প্রাকৃতিক পরিবেশে এসেও যদি কারো বোরিং লাগে। তাহলে আর কী করার? এত্ত সুন্দর একটা জায়গা। টিলার উপরে মিনিমালিস্টিক কনসেপ্টে বানানো QB-তে আছে ৩ টি একরুমের বাংলো, আর ৩ টি তাবুর সাইট । খুব সাধারণে অসাধারণ আর ন্যাচারাল সবকিছু । ল্যান্ডস্কেপ থেকে শুরু করে ফার্নিচারগুলোও । সিম্পল মেন্যু ধরে খাবার-দাবার, যার অনেকটাই নির্ভর করে সেদিন পাহাড়ি বাজারে কি পাওয়া যাবে সেটির উপর । ফ্রিজিং করে রাখা মাছ-মাংসের চল এখানে নেই । শাক-সব্জী বেশীরভাগই এদের নিজেদের টিলার উপর চাষ করা ।
টিলা জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে দেশী মোরগ-মুরগী। ইচ্ছে করলে নিজেই রান্না করা যায়। ধরতে পারলে পাহাড় বেড়ানো দেশী মুরগীর ঝালঝাল ঝোলও খাওয়া যায়। কিংবা রাতে আকাশের নীচে বসে Bar-B-Q বা পাহাড়ি ঢংয়ে আগুনে পোড়ানো ব্যাম্বু-চিকেনের স্বাদ নেওয়া যায়। আছে রাতে মুভি দেখার ব্যবস্থা। তবে খোলা আকাশের নীচে। আমরা সবাই মিলে প্রজেক্টের সেট করে মুভি দেখেছি। আছে দাবা-লুডু-উনো খেলার ব্যবস্থাও। তবে নেই WiFi, বেশীরভাগ সময়ই নেই 4G নেটওয়ার্ক । নেই ডিজে গানের সাথে অস্বাভাবিক দাপাদাপি আর ফেক স্মাইলিং-এ ছবি তোলার ব্যবস্থা। নেই একগাদা আইটেম দিয়ে বুফে ব্রেকফাস্ট আর গলাকাটা দাম। এসব নেই জন্যই কি কারও বোরিং লাগতে পারে?
এইবার রাগঢাক বাদ দিয়ে প্রশ্ন করলাম- বোরিং লাগছে কেন?
বিরক্তিভাব নিয়ে বলল- জানি না।
-কী রাগ দেখাচ্ছ নাকি রাগ করছো?
– কোনটাই না।, আচ্ছা, একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি?
-এটার জন্য কি পারমিশন নেওয়াটা খুব জরুরী হয়ে গেলো?
– না, বিষয় টা তেমন না। আমি না, বুঝতে পারছি না কিছু!
– কিসের কথা বলছো?
– তোমার কথা বলছি!
-আমার আবার কী হলো?
– আচ্ছা, শোন, আমি না তোমাকে বুঝতেই পারি না। তবে তোমার না বলা কথা অনেক বুঝেছি। তুমি বলেছিলে রাতে ঘুম আসছে না, আমি বুঝেছিলাম তুমি সময় চাইছো। তুমি বলেছিলে একটু বের হয়ে আকাশে মেঘ দেখো, আমি বুঝেছিলাম তোমার মন খারাপ।
তুমি বলেছিলে আজ বিকেলে তুমি বেলকুনিতে এসো, আমি বুঝেছিলাম সাক্ষাত চাও। তুমি বলেছিলে,অন্ধকারে আমার বড্ড ভয়; আমি বুঝেছিলাম তোমার আমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। তুমি বলেছিলে সেন্ট মার্টিন যেতে ইচ্ছে করছে; আমি বুঝেছিলাম পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটতে চাইছো। তুমি বলেছিলে তোমার প্রিয় রঙ নীল, আমি বুঝেছিলাম তোমার কষ্ট হচ্ছে। তুমি বলেছিলে অংক ভালো লাগেনা, আমি বুঝেছিলাম তুমি কবিতা ভালোবাসো। একটু কথা কাটাকাটি আর অভিমানের জন্য তুমি বলেছিলে, এই হুটহাট দেখা করা,অসময়ে ফোন করা আর তোমার ভালো লাগছেনা; আমি বুঝে গিয়েছিলাম, বিচ্ছেদ চাইছো এবং তুমি মুক্তি চাও।
এরপর সব বুঝে আমি যখন তোমাকে বুঝার দার্শনিক, তখন মনে হলো তুমি শুধু আমার জন্য একটা ক্যারেক্টর তবুও কাল্পনিক। শুধু এক নজর দেখার জন্য রাত ৩ টায় তোমার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছি। তুমি গেটের বাহিরে আসতে পারো নি। শুধু এক পলক দেখে চাপা কান্না নিয়ে বাসায় ফিরেছি। মাঠে যখন অর্ধমৃত অবস্থায় পড়েছিল, তোমার কাছে কেউ যায়নি। আমি সমাজ এবং পরিবারের সম্মানকে পরোয়া না করে তোমার কাছে গিয়েছি। মাটি থেকে বিধস্ত আর রক্তাক্ত মুখটা উঁচু করে দেখে পাগলের আহাজারি করেছি। ভেবেছি তুমি আর নেই। আমার পৃথিবীর নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তোমার নাকের কাছে হাত দিয়ে অনুভব করলাম-তুমি নি:শ্বাস নিচ্ছ। তখন আমিও আশা ফিরে পেলাম। আমি তোমার নি:শ্বাস বুঝতে পেরেছি কিন্তু আজও তোমাকে বুঝতে পারিনি। দুই বছর পর হঠাৎ তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে,”কেমন আছো?” আমি বুঝে গিয়েছিলাম তুমি ভালো নেই। কারণ জিজ্ঞেস করলে তুমি বলেছিলে তুমি জাননা। আমি ভেবেছিলাম- হয়তো, আমি পাশে নেই তাই ভালো নেই। কিন্তু আমার ভাবনাগুলো ছিল একপেশে অপার্থিব এবং নিরর্থক।
– ওইসব কথা এখন বলছো কেন? তুমি ত জানো, আমি এগুলো আর মনে করতে চাই না। আমি আর নিতে পারি না। তবে আমাকে না বুঝার কি আছে?
– জানিনা, কিন্তু তোমাকে বুঝতে ইচ্ছে করে খুব। তোমার প্রতি ভয় আর সম্মানের খাতিরে সেটা পারি না। তুমি এমন কেন? মাঝে মাঝে বড্ড ভয় হয়!
– কেন?
– বুঝার পর যদি তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে হয়। মানে ছেড়ে যাওয়ার ভয়। না পাওয়ার ভয়। কিন্তু তোমার প্রতি সম্মান টা কই থেকে আসে সেটা বুঝি না।
– বুঝতে চেয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছ?
– আচ্ছা, এসব বাদ দাও। এখন বলো, এখানে কেন নিয়ে আসছো?
– আমি নিয়ে আসছি, মানে বুঝলাম না!
– ও, সরি। আমিই আসছি। আচ্ছা, তোমার একটা উত্তর আমার অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
– কি?
– একবার তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- সত্যিই কি আমি তোমার প্রথমা? তুমি বলেছিলে- প্রথমা, দ্বিতীয়া বলে কিছুই নেই, সবশেষে যাকে দেখলাম তার প্রতি তৃষ্ণা সবচেয়ে বেশি। আমি জানি তার নাম কি, নাম তার অজানা। কিন্তু তাহলে আমি কি প্রথমা নাকি শেষের শেষ অজানা?
– আমি না বলছি, অজানাকে জানতে চেও না।
– কিন্তু কেন?
– প্রশ্ন কমন কিন্তু উত্তর জানা নাই। মানে উত্তরও অজানা।
– প্রশ্ন কমন হলে উত্তর কেন জানা থাকবে না?
-কিছু প্রশ্ন কমন থাকলেও উত্তর জানা থাকে না। আচ্ছা, তুমি কেন এখানে আসছো? সেটার উত্তর দিতে পারবে?
– না।
– আমিও তেমন!
– আজিব, এখানে আসছি তো মিনিমালিস্টিক লাইফ স্টাইলে ইউস্টু হতে।
অনেকক্ষণ পর নিরাবতা ভেঙে জিজ্ঞেস করল-আচ্ছা, মিনিমালিস্টিক লাইফ স্টাইলটা কি?
বিস্ময় নিয়ে হতচকিয়ে বললাম -এইটা কি বললে?
– আমি আসলেই এটা সম্পর্কে জানি না। এখানে আসবো, তাই রাজি হয়েছিলাম।
– মিনিমালিজম হল জীবন থেকে অতিরিক্ত বা বাহুল্য সব কিছু কমিয়ে ফেলা এবং ঠিক যেইটা লাগবে, সেইটা নিয়ে থাকা। সেটা আমাদের আশেপাশের মানুষ হোক কিংবা আসবাবপত্র হোক। কারণ অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় বন্ধু-বান্ধব বা কাজ বাদ দিতে না পারলে খুশি থাকা প্রায় অসম্ভব। এই ছোট্ট জীবনে এত মানুষ বা এত কিছুর প্রয়োজন হয় না। যে ছাড় দেয় না, তাকে ছেড়ে দিতে হয়। যে চলে যেতে চায়, তাকে রাস্তায় এগিয়ে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে মিনিমালিস্ট লাইফ লিড করা খুব দরকার।
এইবার সে একরাশ চাপা ক্ষোভ নিয়ে বলল- তো, আমি কি করবো?
– তুমি এখান থেকে চলে যাও।
আমার এই কথা শোনার পর সে আকাশ থেকে পড়লো। হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলো- কেন, লাস্ট ডিজিট এর আগের দুইটা ডিজিট 77 থেকে কি কোন এসএমএস এসেছে নাকি?
মাথাটা আলতো করে নাড়িয়ে বললাম- জানিনা, তুমি এখান থেকে চলে যাও। কারণ আমি তোমার ভাল চাই।
সে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কাপাকাপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো
– তার মানে আমার ভালো চাও কিন্তু আমারে চাও না! আর এইটাই তোমার মিনিমালিজম!