মালেক ইকবাল ||
মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘটে যাওয়া দুটি বিশ্বযুদ্ধ, ৯/১১ খ্যাত সন্ত্রাসী হামলা, ধর্মীয় উগ্রবাদীতা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং প্রযুক্তি যেসব পরিবর্তন আনতে পারেনি, কোভিড-১৯ ঠিকই সেসব পরিবর্তন আনবে। বিশ্ব মোড়লদের নতুন করে কপালে ভাজ ফেলাবে। দেশ পরিচালনায় সামরিক খাত নয় বাজেট বাড়াবে জনস্বাস্থ্য খাতে। কারণ পারমাণবিক শক্তি, যুদ্ধ বিমান সবকিছুকে পরাস্ত করছে এই অদৃশ্য অস্ত্র। এতদিন বিশ্ব বাজেট করেছে যুদ্ধের জন্য,শান্তির জন্য নয়৷ কিন্তু এবার নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষায় শক্তিশালী অনেক দেশকে মাস্ক ও সাধারণ মেডিকেল যন্ত্রপাতির জন্য অন্য দেশের দিকে হাত বাড়াতে হয়েছে। ফলে পরবর্তী বিশ্বে বাজেট হবে জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সহযোগিতা অনেক ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সামরিক খাতের গুরুত্ব কমিয়ে আনবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কোভিড-১৯ কে ‘চাইনিজ ভাইরাস’ বলায় চীন এবং আমেরিকার মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ আরও বাড়বে। চীন বারবার বিশ্ব দখলের পায়তারা করলেও আমেরিকা বারবার কোভিড নিয়ে বিশ্বের দরবারে চীনের বিরুদ্ধে ইস্যু দাড় করাবে। চীনকে দাবিয়ে রাখতে ট্রাম্প – মোদি সম্পর্ক আরও গভীর হতে পারে। তবে চীন এগিয়ে থাকবে।
কোভিড-১৯ এর বিস্তার ইউরোপ-আমেরিকাসহ পরিক্রমাশীল দেশসমূহের সক্ষমতাকে প্রশ্নবৃদ্ধ করেছে৷ সামরিক সরঞ্জাম তৈরীতে ওস্তাদ ইতালি তার নাগরিককে বাঁচাতে পারেনি এই মহামারি থেকে ৷ আফ্রিকা চুষে নিয়ন্ত্রণ করা ফ্রান্স, নতুন মোড়ল হওয়ার স্বপ্ন দেখা জার্মানি আত্মসমর্পণ করেছে এই গায়েবি শক্তির কাছে ৷ বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ রাজপরিবারের উত্তরসূরি প্রিন্স চার্লসকে এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারেনি ব্রিটেন। আক্রান্ত হয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ এত বড় মহামারির দিনে বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে পায়নি ইউরোপ। বরং যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত সীমান্ত বন্ধ করে দেয় ইউরোপের সাথে৷ এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোও একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারেনি৷ এই প্রথমবার ইউরোপ দেখল ন্যাটো জোট, মিসাইল তাকে বাঁচাতে পারছে না৷ জনগণ দেখল ডলারের বিনিময়ে মানুষ বাঁচতে পারছে না৷ অসহায়ভাবে মানুষ মরছে৷ এসব ঘটনা ইউরোপ -আমেরিকায় ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিবে। ন্যাটো জোট, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র- ইউরোপ সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়বে৷ তবে যেহেতু সার্ক দেশসমূহ এই ভাইরাস প্রতিরোধ গঠন করেছে সুতরাং সার্কের ভবিষ্যত সম্পর্ক মজবুত হবে৷ এছাড়া জি-২০ যে ফান্ড গঠন করতে যাচ্ছে তাও আলোর মুখ দেখাবে বৈশ্বিক সম্পর্কে। ওইদিকে ইসরাইল হয়তো পানীয় পণ্যের পাশাপাশি ওষুধ এর ওপর গুরুত্ব বাড়াবে। আরব এবং মধ্যে পাশ্চাত্যের দেশ গুলো কি করবে এটা দেখার বিষয়?
লেখক: প্রভাষক, ইংরেজী বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ