মালেক ইকবাল।।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, কোনো পরাশক্তিই আফগানিস্তানকে জয় করতে পারেনি। ব্রিটিশ, সোভিয়েত ইউনিয়ন অবশেষে সেইফ এক্সিটে পালিয়ে গেল মার্কিন পরাশক্তি এবং রেখে গেল আফগান পুতুল সরকার। কিন্তু সেই পুতুল সরকার এখন তালিবান মুজাহিদদের সামনে অসহায় হয়ে পড়ছে।

মার্কিন সৈন্যরা যখন একে একে আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে শুরু করেছে, তখন একের পর এক সমস্ত জেলার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেছে আফগান মুজাহিদ। সর্বশেষ তারা পাকিস্তান সাথে লাগোয়া সীমান্তবর্তি এলাকাও দখল করে নিয়েছে। আর এই সীমান্ত দিয়েই পাকিস্তানের সাথে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিক পরিবহণ যাতায়াত করে থাকে। আফগান জনগণ যেখানে তালিবানদের স্বাগতম জানাচ্ছে, সেখানে গাত্রদাহ হচ্ছে পশ্চিমা মিডিয়ার!

তালেবানদের সাথে আলচোনা করেই মার্কিনিরা আফগানিস্তান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ, মার্কিন সরকারও জানতো, তারা আফগান ছাড়ার সাথে সাথেই তালিবান পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিবে। কিন্তু তালিবানরা যে এতো দ্রুতই অগ্রসর হবে তা হয়তো ভাবতে পারেনি। যার কারণে তাদের যেমন গাত্রদাহ হচ্ছে, তেমনি মাথা ব্যাথাও হচ্ছে।

কূটনৈতিক দিক থেকে গতবারের চেয়ে এইবার তালিবানদের অনেক বেশি পরিপক্ক মনে হচ্ছে। যেমন, তালিবানরা ইতিমধ্যেই রাশিয়া এবং চীনের সাথে সমঝোতা করে ফেলছে। তালিবানদের উপর বহিঃবিশ্বের যেসব চাপ আসতে পারে, তারা প্রথমে সেগুলোই বন্ধ করতেছে। যেমন তারা বলছে, তালিবানরা আল কায়েদার মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠিকে আশ্রয় দিবে না। আইএস ইসলামের শত্রু, তালিবানদের শত্রু। একইসাথে চীনকে সন্তুষ্ট করতে তালিবান বলছে, তারা কোনো উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দিবে না। তার মানে বোঝাই যাচ্ছে, নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙ্গা করতে তালিবানরা আগে থেকেই চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে হাটছে। আর চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে পিছন থেকে যাবতীয় কলকাঠি যে পাকিস্তান চালাচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়।

তালিবানরা যতো দ্রুত কাবুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, পাকিস্তানের মুখের হাসি ততোই প্রসারিত হচ্ছে, আর ভারতের কপালে চিন্তার ভাজ ততোই স্পষ্ট হচ্ছে। কারণ, ভারত আফগান সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ। আর সেই চুক্তির জেরে তারা আফগানিস্তানে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। এখন সেসব বিনিয়োগ সবই জলে যাওয়ার পথে। আফগানিস্তান তালিবানদের হাতে চলে গেলে যদি ভারতের শুধু টাকা নষ্ট হতো, তারপরও হয়তো ভারত খুব একটা ভাবতো না। কিন্তু এখন তাদের কাশ্মির নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। আর সেই ভাবনার বাস্তবতাও দেখা যাচ্ছে। যে মোদি সরকার কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা রোহিত করেছে, সেই মোদি সরকার আবারও কাশ্মিরকে রাজ্যের মর্যাদা দিতে চাচ্ছে। আর এই সিদ্ধান্ত যে সীমান্তের চর্তুমখি চাপের কারণেই ভারত সরকার নিতে বাধ্য হচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়।

আফগানিস্তানে তালিবান শক্তির  উত্থান হলে এই অঞ্চলের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এই পরিবর্তন কারও জন্য কাল আবার কারও জন্য হবে নতুন দুয়ার। রাজনীতির মাঠ বুঝা বড় দায়? দেখা যাক বল এখন কার পায়ে?

সংকলনেঃ মালেক ইকবাল, প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *