মালেক ইকবাল।।
আপনারা আবার আমার এই কথায় রাগ কইরেন না। চলুন একটু নাড়া দিয়ে আসি। বিশ্বের শান্তির দূত জাতিসংঘ আছে না? উনি ইসরায়েলের বিপক্ষে কিছুই বলবে না। জাতিসংঘের কথা বাদ দেন। আপনাদের প্রাণের সংগঠন OIC আছে না? উনাদের মানবতা আর ক্ষমতা ফার্মগেট অভার ব্রিজের নিচ দিয়ে যায়। আবার ইসলামের আতুর ঘর সৌদি আরব আছে না? উনারা তো ইসরায়েলের ভাই আমেরিকার কথায় সিনেমা হল আর সী বিচ ওপেন করে। অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্র তো নিজদের গদি বাচাতে ব্যস্ত। আর এই গদি বাচানোর জন্য ভাসুরদের তেল মাড়তেই হবে। আবার আপনারা যারা ট্রাম্পের পরিবর্তে বাইডেন বাবু কে ভোট দিয়েছিলেন, তারা এবার একটু বালিশ খাড়া করে ঘুমান।

ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুধুমাত্র ছোট্ট একটি দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না। ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মানে পুরো এক পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। অনেক সময় বলা হয়, আরবরা যদি খালি থুতু ফেলে তাতেই ইসরাইল তলিয়ে যাবে। কথাটিতে যুক্তি আছে। খুবই ছোট একটি দেশ ইসরাইল। কিন্তু এখানে ইসরাইল মানে আমেরিকা, ইসরাইল মানে ব্রিটেন, ইসরাইল মানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এমনকি ইসরাইল মানে ভারত। ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মানে বিশ্বের সব বড় বড় পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।

আরব দেশগুলো এক কাতারে দাঁড়ালে এক নিমিষেই ইসরায়েল ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। কিন্তু তারা ইচ্ছে করলেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে না। কারণ এই আরব দেশগুলোর সব অস্ত্রই অন্যদের কাছ থেকে কেনা। তাদের অনুমতি ছাড়া এই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না। আর এগুলো এমন সব দেশ থেকে কেনা যারা, সিরিয়াতে, ইয়েমেনে, লিবিয়ায়, এই অস্ত্রগুলো দিয়ে আক্রমণ করার অনুমতি দিবে ঠিকই, কিন্তু ইসরাইলের দিকে গুলি করা তো দূরের কথা ওই দেশটির দিকে তাক করতেও দিবে না।

এই অঞ্চলে ইরানই হচ্ছে একমাত্র রাষ্ট্র যার অস্ত্রের সিংহভাগ নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি। তাই সে যখন যার বিরুদ্ধে ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারে। তবে ইরান এগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

অন্যদিকে তুরস্কের সামরিক সামর্থ্য এককভাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যথেষ্ট না। কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি দেশের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান চালানোর জন্য যে পরিমাণ ভারি অস্ত্র-শস্ত্র দরকার সে তুলনায় তুরস্কের নিজস্ব তৈরি অস্ত্রের পরিমাণ খুবই কম। যেমন তুরস্ক থেকে সরাসরি ইসরাইলে আক্রমণ করতে হলে শুধুমাত্র বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনী ব্যবহার করতে হবে। অথচ তুরস্কের এই দুটি বাহিনীকেই বছরের পর বছর দুর্বল করে রাখা হয়েছে। তুরস্কের যুদ্ধ বিমানগুলোর প্রায় সবই আমেরিকা থেকে কেনা। তুরস্কের কোন বিমানবাহী রণতরী নেই যা দিয়ে ভূমধ্যসাগরে ফিলিস্তিনের তীরে তার সামরিক উপস্থিতির জানান দিবে। তুরস্ক থেকে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে ইসরাইলে বিমান হামলা চালানো খুব সহজ একটি কাজ না।

তবে এখানে যে জিনিসটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে যে ইসরাইলের প্রতিবেশী যে দেশগুলো আছে যেমন জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া, মিসর। এই দেশগুলো যদি আক্রমণ করে এবং তখন তুরস্ক, পাকিস্তান, ইরান এবং অন্য মুসলিম দেশ একত্রে এই দেশগুলোকে সামরিক সমর্থন দেয়, একমাত্র তখনই সম্ভব ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। কারণ ইসরাইলের পশ্চিমা শক্তি ছাড়াও আছে পারমানবিক শক্তি। আর মুসলিম বিশ্বের মধ্যে একমাত্র পাকিস্তানের আছে এই শক্তি। সুতরাং এই সব মুসলিম দেশের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যদিও তা সম্ভব বলে মনে হয় না। কিন্তু যদি সেরকম কিছু হয় তখন সে যুদ্ধ হবে এক নতুন এক বিশ্বযুদ্ধ।

কিন্তু দেখুন ইসরাইলের চারপাশের এই মুসলিম দেশগুলো— সিরিয়া, মিসর, লেবানন — এদের সবগুলোকেই কিন্তু অকেজো করে রাখা হয়েছে।
সুতরাং তুরস্কের বা অন্য কোন মুসলিম দেশের এককভাবে ইসরাইলে আক্রমণ করার ক্ষমতা নেই।

সংকলক – প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *